চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডি : তদন্তেই বছর পার, সব চলছে আগের মতোই (ভিডিও)
রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুনের এক বছর আজ। ২০১৯ সালের এদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণ হারান ৭১ জন। এর মধ্যে তিনটি মরদেহ এখনও শনাক্ত হয়নি। এরপর নানা কথা হলেও, এক বছরেও পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম সরানো যায়নি। দুর্ঘটনার পর, পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম সরানো নিয়ে হৈ চৈ হলেও, সময়ের সঙ্গে সবই থেমে গেছে। এখন সব চলছে, আগের মতো।
এ ঘটনার এক বছর পার হলেও পুলিশ তদন্ত শেষ করতে পারেনি। চার্জশিট দিতে পারেনি। লাশগুলোর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবীর হোসেন বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ ৭১ জনের ময়নাতদন্ত শেষ করতে পারেনি। এ ছাড়া অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কয়েকজনের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেলেও তাদের ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আশপাশের কেউ তাদের ঠিকানা দিতে পারছে না। তাদের নাম-ঠিকানা নিশ্চিত না হয়ে চার্জশিট দেয়া যাচ্ছে না।
মর্মান্তিক এই ঘটনায় স্বজন হারাদের শোক সবচেয়ে বেশি। স্বজনদের শোক আজও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের। কারও পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, কারও বা পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যও; একেকজনের গল্প আলাদা আলাদা হলেও শোক সবার একই।
অভিযোগ দুর্ঘটনার এক বছর পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা আজও পাননি প্রশাসনের সহায়তা। আর্থিক সহায়তা বা সরকারি চাকরির যেসব প্রতিশ্রুতি তাদের উদ্দেশ্যে ছিল তা আজও পূরণ হয়নি।
এদিকে ওয়াহেদ ম্যানশন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাসায়নিক পদার্থ, প্লাস্টিকের কাঁচামালে সয়লাব পুরো এলাকা। সরু গলিগুলোর দোকানে দোকানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে রাসায়নিক ও বিভিন্ন কাঁচামাল; আগুনের স্পর্শ পেলেই এগুলো হতে পারে এক একটি ভয়ঙ্কর বিস্ফোরক। আবারো কেড়ে নিতে পারে কোনও মায়ের কোল, পিতৃহারা হতে পারে কোনও সন্তান।
তবে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের পর দাবি উঠেছিল পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন, প্লাস্টিকের কাঁচামাল সরিয়ে অন্য জায়গায় নেয়ার। দাবির প্রেক্ষিতে কয়েকদিন সরব ছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বিস্ফোরক অধিদপ্তর। অভিযানও চালানো হয়েছিল সেখানে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে চকবাজারে ফিরে আসে পুরনো রূপে। ভবনে ভবনে জমতে শুরু করে ফের কেমিক্যাল গোডাউন।
২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ করেই চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে বিকট শব্দ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুনের লেলিহান শিখায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় ওয়াহেদ ম্যানশনসহ আশপাশের এলাকা। আতঙ্কে লোকজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। ততক্ষণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের ভবনেও।
স্থানীয় জানায়, আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের বহু ইউনিট দ্রুত ছুটে এলেও সড়ক সরু থাকায় আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে হয়। রাতভর আগুন নেভাতে কাজ করে ফায়ার সার্ভিস। ভোরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু এরইমধ্যে হারিয়ে যায় বহু তাজা প্রাণ।
এসএস
মন্তব্য করুন